প্রতিবছর দেশে প্রায় ৩ লক্ষ লোক এ সমস্ত রোগে মৃত্যুবরণ করে এবং ৩ লক্ষাধিক লোক ক্যান্সার, কিডনি , লিভার সিরোসিস, স্ট্রোকে প্যারালাইজড, জন্মগত হৃদরোগ ও থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। অর্থের অভাবে এসব রোগে আক্রান্ত রোগীরা যেমনি ধুঁকে ধুঁকে মারা যায়, তেমনি তার পরিবার চিকিৎসার ব্যয় বহন করে নিঃস্ব হয়ে পড়ে। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সমাজসেবা অধিদফতরের মাধ্যমে এ সকল অসহায় ক্যান্সার, কিডনি এবং লিভার সিরোসিস রোগে আক্রান্ত গরীব রোগীদেরকে এককালীন ৫০,০০০ (পঞ্চাশ হাজার) টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান করার লক্ষ্যে সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রমের আওতায় এ কর্মসূচিটি বাস্তবায়িত হচ্ছে।
সংজ্ঞা
১. ক্যান্সার
বিশ্বের সমস্ত প্রাণীর শরীর অসংখ্যা ছোট ছোট কোষের মাধ্যমে তৈরি। এই কোষগুলো একটা নির্দিষ্ট সময় পরপর মারা যায়। এ পুরনো কোষগুলোর জায়গায় নতুন কোষ এসে জায়গা করে নেয়। সাধারণভাবে কোষগুলো; নিয়ন্ত্রিতভাবে এবং নিয়মমতো বিভাজিত হয়ে নতুন কোষের জন্ম দেয়। সহজভাবে বলতে গেলে যখন এই কোষগুলো কোনো কারণে অনিয়ন্ত্রিতভাবে বাড়তে থাকে তখনই ত্বকের নিচে মাংসের দলা অথবা চাকা দেখা যায়। একেই টিউমার বলে। এই টিউমার বেনাইন বা ম্যালিগন্যান্ট হতে পারে। ম্যালিগন্যান্ট টিউমারকেই ক্যান্সার বলে। সংক্ষেপে বলতে গেলে, অনিয়ন্ত্রিতভাবে বিভাজনক্ষম হয়ে বৃদ্ধি পাওয়া কলাকে নিয়োপ্লসিয়া (টিউমার) বলে এবং এই নিয়োপ্লসিয়ার ম্যালিগন্যান্ট রূপকে ক্যান্সার বলে।
২. কিডনি রোগ
কিডনি যখন তার কার্যক্ষমতা ক্রমান্বয়ে হারাতে থাকে তখন শরীরে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। যদি কিডনি রোগ বেশি বেড়ে যায় তখন রক্তে দুষিত পদার্থ বাড়তে থাকে এবং অসুস্থবোধ হতে থাকে। সেই সঙ্গে উচ্চ রক্তচাপ, অ্যানিমিয়া (লাল রক্ত কনিকার স্বল্পতা), হাড় দুর্বলতা, পুষ্টিহীনতা, স্নায়বিক ক্ষতিগ্রস্ততা দেখা দিতে পারে। ক্রনিক কিডনি ডিজিজ হৃদরোগ ও রক্তনালির রোগ বৃদ্ধি করতে পারে। এসব রোগ এবং রোগের বৃদ্ধি ঘটতে থাকে ধীরগতিতে এবং অনেক দিন ধরে। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এবং অন্যান্য মেটাবলিক ডিসঅর্ডারের কারণে ক্রনিক কিডনি রোগ হতে পারে। প্রাথমিক অবস্থায় রোগ নির্নয় এবং চিকিৎসা করালে রোগ নিরাময় বা নিয়ন্ত্রণ বা আরো খারাপ হওয়ার দ্রুততাকে ধীরগতিসম্পন্ন করা যায়। যদি রোগ দ্রুত বাড়তে থাকে এবং এক পর্যায়ে কিডনি বিকল হয়ে পড়ে তখন কৃত্রিম উপায়ে অর্থাৎ ডায়ালাইসিস পদ্ধতিতে রক্ত পরিশুদ্ধের ব্যবস্থা করতে হয় এবং কিডনি প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে জীবন রক্ষা করা যেতে পারে।
৩. লিভার সিরোসিস
সিরোসিস লিভারের একটি ক্রনিক রোগ, যাতে লিভারের সাধারণ আর্কিটেকচার নষ্ট হয়ে লিভারের স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা হারায়। অনেক ক্ষেত্রেই লিভার সিরোসিস থেকে লিভারে ক্যান্সারও দেখা দিতে পারে।
৪. স্ট্রোকে প্যারালাইজড
হঠাৎ করে শরীরের যেকোন অংশের কর্মক্ষমতা হ্রাস অথবা পক্ষাঘাত হওয়া যা ২৪ ঘন্টার বেশী সময় ধরে থাকবে এবং যা মস্তিষ্কের রক্তনালীর জটিলতার কারণে সৃষ্ট (Stroke may be defined as sudden Neurological deficit which persist for 24hrs or patient may die within 24hrs which is non traumatic vascular origin)।
৫. জন্মগত হৃদরোগ
জন্মের সময়ই শিশুর হৃদপিন্ডে বিভিন্ন জন্মগত ত্রুটি (ডেভেলপমেন্টাল এ্যানোমালি) থাকতে পারে। এর মধ্যে হৃদপিন্ডের মধ্যে ছিদ্র (অ্যাট্রিয়াল সেপটাল ডিফেক্ট, ভেন্ট্রিকুলার, সেপটাল ডিফেক্ট), ট্রেটালজী অফ ফ্যালট, প্যাটেন্ট ডাক্টাস আর্টারিওসাস ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এই সব জন্মগত হৃদরোগের ত্রুটির কারণে একদিকে যেমন শিশুর শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধি বাধাগ্রস্থ হয়, তেমনি ধীরে ধীরে এই ত্রুটিসমূহ অনিরাময়যোগ্য হয়ে যায়। যার পরিণাম নিশ্চিত মৃত্যু। অনিরাময়যোগ্য হওয়ার পূর্বে যদি যথাযথ চিকিৎসা যেমন-কার্ডিয়াক সার্জারী বা ডিভাইসক্লোজার করা যায় তবে রোগীরা সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবন লাভ করতে পারে।
৬. থ্যালাসেমিয়া
থ্যালাসেমিয়া একটি বংশগত রক্তের রোগ। এই রোগে রক্তে অক্সিজেন পরিবহনকারী হিমোগ্লোবিন কণার উৎপাদনে ত্রুটি হয়। থ্যালাসেমিয়া ধারণকারী মানুষ সাধারণত রক্তে অক্সিজেন স্বল্পতা বা অ্যানিমিয়াতে ভুগে থাকেন। অ্যানিমিয়ার ফলে অবসাদগ্রস্ততা থেকে শুরু করে অঙ্গহানি ঘটতে পারে। থ্যালাসেমিয়া দুইটি প্রধান ধরনের হতে পারে: আলফা থ্যালাসেমিয়া ও বেটা থ্যালাসেমিয়া। সাধারণভাবে আলফা থ্যালাসেমিয়া বেটা থ্যালাসেমিয়া থেকে কম তীব্র। আলফা থ্যালাসেমিয়াবিশিষ্ট ব্যক্তির ক্ষেত্রে রোগের উপসর্গ মৃদু বা মাঝারি প্রকৃতির হয়। অন্যদিকে বেটা থ্যালাসেমিয়ার ক্ষেত্রে রোগের তীব্রতা বা প্রকোপ অনেক বেশি; এক-দুই বছরের শিশুর ক্ষেত্রে ঠিকমত চিকিৎসা না করলে এটি শিশুর মৃত্যুর কারণ হতে পারে। এ রোগে আক্রান্ত শিশুরা ফ্যাকাসে ও দুর্বলতা প্রকাশ পায় এবং শারীরিক বৃদ্ধি কমে যায়। প্লীহা বড় হয়ে পেট ফুলে যায়। অস্থি চওড়া হয়ে বিকৃত আকার ধারন করে এবং শারীরিক বৃদ্ধি ব্যহত হয়। থ্যালাসেমিয়া মেজরে নিয়মিত রক্ত সঞ্চালন প্রধান চিকিৎসা। অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন থ্যালাসেমিয়ার একটি কার্যকরী চিকিৎসা। থ্যালাসেমিয়া নিরাময়যোগ্য। তবে যেহেতু এটি একটি জন্মগত সমস্যা, যদি তার জিনগত সমস্যাকে পরিবর্তন করা না হয়, অর্থাৎ যে অঙ্গ দিয়ে সমস্যাযুক্ত হিমোগ্লোবিন তৈরি হচ্ছে, সে অঙ্গ মানে বোনমেরু (অস্থিমজ্জা), এটাকে যদি অস্থিমজ্জা সংযোজনের মাধ্যমে পরিবর্তন করা যায়, তাহলে একে সম্পূর্ণ নিরাময় করা সম্ভব।
লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য
ক) ক্যান্সার, কিডনি , লিভার সিরোসিস, স্ট্রোকে প্যারালাইজড, জন্মগত হৃদরোগ এবং থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত গরীব রোগীদের চিকিৎসা সহায়তা প্রদান;
খ) আক্রান্ত রোগীর পরিবারের ব্যয়ভার বহনে সহায়তা করা;
গ) সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে সহায়তা করা।
কর্মসূচি বাস্তবায়ন কৌশল
ক্যান্সার, কিডনি , লিভার সিরোসিস, স্ট্রোকে প্যারালাইজড, জন্মগত হৃদরোগ এবং থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত গরীব রোগীদের সনাক্ত করে সমাজসেবা অধিদফতরের জনবল, স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও সুধীজনের সহযোগীতায় এ নীতিমালা অনুসরণ করে প্রকৃত দুঃস্থ ও অসহায় ব্যক্তিদের তালিকা প্রণয়নপূর্বক গৃহীত কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে।
কার্য এলাকা
ক্যান্সার, কিডনি , লিভার সিরোসিস, স্ট্রোকে প্যারালাইজড, জন্মগত হৃদরোগ এবং থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত গরীব রোগীদের আর্থিক সহায়তা কর্মসূচিতে কার্য এলাকা বলতে সমগ্র বাংলাদেশকে বোঝাবে।
আর্থিক সহায়তা/ অনুদানের পরিমাণ
ক্যান্সার, কিডনি , লিভার সিরোসিস, স্ট্রোকে প্যারালাইজড, জন্মগত হৃদরোগ এবং থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত নির্বাচিত প্রত্যেক গরীব রোগীকে এককালীন ৫০,০০০ (পঞ্চাশ হাজার) টাকা প্রদান করা হবে। আর্থিক অনুদান বৃদ্ধি/হ্রাসের ক্ষমতা সরকার সংরক্ষণ করবে।
প্রার্থী নির্বাচনের মানদন্ড
(ক) নাগরিকত্ব: প্রার্থীকে অবশ্যই বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে।
(খ) দুঃস্থ: সর্বোচ্চ দুঃস্থ ব্যক্তিকে অগ্রাধিকার প্রদান করতে হবে।
(গ) আর্থ-সামাজিক অবস্থা:
১. আর্থিক অবস্থার ক্ষেত্রে: শিশু, নিঃস্ব, উদ্বাস্ত্ত ও ভূমিহীনকে ক্রমানুসারে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
২. সামাজিক অবস্থার ক্ষেত্রে: বয়োজ্যেষ্ঠ, বিধবা, তালাকপ্রাপ্তা, বিপত্নীক, নিঃসন্তান, পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন ব্যক্তিদেরকে ক্রমানুসারে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
(ঘ) ভূমির মালিকানা: প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ভূমিহীন প্রার্থীকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে বসতবাড়ী ব্যতিত কোন ব্যক্তির জমির পরিমাণ ০.৫০ একর বা তার কম হলে তিনি ভূমিহীন বলে গণ্য হবেন।
আর্থিক সহায়তা প্রাপ্তির যোগ্যতা ও শর্তাবলী
১. ক্যান্সার, কিডনি এবং লিভার সিরোসিস, স্ট্রোকে প্যারালাইজড, জন্মগত হৃদরোগ এবং থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত রোগীকে অবশ্যই রেজিস্টার্ড চিকিৎসক কর্তৃক প্রত্যয়িত হতে হবে;
২. সংশ্লিষ্ট রোগের বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের ব্যবস্থাপত্র ও টেস্ট রিপোর্ট থাকতে হবে;
যেমন-ক্যান্সারের ক্ষেত্রে Biopsy বা অন্যান্য টেস্ট রিপোর্ট থাকতে হবে এবং কিডনি রোগের ক্ষেত্রে; Acute Renal Failure অথবা Chronic Renal Failure এ আক্রান্ত ডায়ালাইসিস সেবা নিচ্ছে এমন রোগীদেরকে বিবেচনা করতে হবে। তবে;যে সকল এলাকায় ডায়ালাইসিস সেবা নেয়ার সুযোগ নেই, সেখানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক কর্তৃক রোগের স্বপক্ষে প্রত্যয়ন গ্রহণ সাপেক্ষে এ সাহায্য প্রদান করা যাবে।
৩. জাতীয় পরিচয় পত্র/জন্ম সনদ (১ম শ্রেণীর গেজেটেড অফিসার কর্তৃক সত্যায়িত ফটোকপি) থাকতে হবে;
৪. বাছাই কমিটি কর্তৃক নির্বাচিত হতে হবে।
প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া
১. উপপরিচালকগণ ক্যান্সার, কিডনি , লিভার সিরোসিস, স্ট্রোকে প্যারালাইজড, জন্মগত হৃদরোগ এবং থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত রোগীকে আর্থিক সহায়তা প্রদানের জন্য প্রাপ্ত আবেদনের আলোকে একটি প্রাথমিক তালিকা প্রস্তুত করে জেলা কমিটিতে পেশ করবেন।
২. সংশ্লিষ্ট উপপরিচালক তার জেলাধীন আবেদনকারী ক্যান্সার, কিডনি , লিভার সিরোসিস, স্ট্রোকে প্যারালাইজড, জন্মগত হৃদরোগ এবং থ্যালাসেমিয়া রোগীদের মধ্যে প্রাথমিকভাবে যোগ্য ও অযোগ্য ব্যক্তির চিকিৎসা সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও তথ্য সম্বলিত দুটি পৃথক তালিকা ও রেজিষ্টার সংরক্ষণ করবেন।
৩. উক্ত তালিকা এবং প্রাপ্ত আবেদনসমূহ জেলা বাস্তবায়ন কমিটির সভায় উপস্থাপন করতে হবে এবং বাস্তবায়ন কমিটি আবেদনপত্রসমূহ যাচাই বাছাই করে আর্থিক সহায়তা প্রাপ্তির যোগ্য একাটি তালিকা (আনুষাংগিক কাগজপত্রসহ) অনুমোদনক্রমে চেক বিতরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
উপজেলাওয়ারী পরিসংখ্যান
ক্র নং |
উপজেলা/ সিটি কর্পোরেশনের নাম |
মোট উপকারভোগীর সংখ্যা |
২০২২-২৩ অর্থবছরের ১ম কিস্তিতে প্রদেয় |
১ |
২ |
৩ |
৪ |
১ |
সিটি কর্পোরেশন |
২১০ |
১৯ |
২ |
সিলেট সদর |
১২২ |
১১ |
৩ |
দক্ষিণ সুরমা |
১৭৭ |
২০ |
৪ |
গোলাপগঞ্জ |
২২৫ |
২৭ |
৫ |
বিয়ানীবাজার |
৮০ |
১২ |
৬ |
জকিগঞ্জ |
১২১ |
১৪ |
৭ |
কানাইঘাট |
৯৩ |
১০ |
৮ |
গোয়াইনঘাট |
৮৫ |
১১ |
৯ |
বিশ্বনাথ |
১৮৮ |
১৯ |
১০ |
বালাগঞ্জ |
৫৯ |
৬ |
১১ |
ওসমানীনগর |
৬০ |
৮ |
১২ |
ফেঞ্চুগঞ্জ |
৭৩ |
৭ |
১৩ |
জৈন্তাপুর |
৯৪ |
১০ |
১৪ |
কোম্পানীগঞ্জ |
৪৭ |
৭ |
সর্বমোট : |
১৬৩৪ |
১৮১ |
Planning and Implementation: Cabinet Division, A2I, BCC, DoICT and BASIS